জন হপফিল্ড: বিজ্ঞানী থেকে বিপ্লবী
অনুপ্রেরণার গল্প:
১৯৩৩ সালে শিকাগোতে জন্ম নেওয়া জন হপফিল্ডের জীবন যেন বিজ্ঞানের প্রতি এক অন্তহীন ভালোবাসার গল্প। বাবা-মা দুজনেই পদার্থবিদ, তাই ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ছিল তাঁর রক্তে মিশে। কিন্তু তিনি কখনোই নিজেকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। ১৯৫৮ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করার পর, তিনি কঠিন পদার্থবিজ্ঞানে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর মনে সব সময় একটি বড় প্রশ্ন ছিল, জীববিজ্ঞানের জটিল সিস্টেম কীভাবে তথ্য প্রক্রিয়া করে?
১৯৭০-এর দশকে তিনি নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ শুরু করেন। তখন এই ক্ষেত্রটি প্রায় পরিত্যক্ত ছিল, কারণ অনেক বিজ্ঞানীই এটি সম্ভব বলে বিশ্বাস করতেন না। তবে হপফিল্ড তাঁর কাজের মাধ্যমে দেখান যে জীববিজ্ঞানের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮২ সালে তিনি তৈরি করেন হপফিল্ড নেটওয়ার্ক, যা তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করতে সক্ষম। এই আবিষ্কার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
সংগ্রামের গল্প:
জন হপফিল্ড যখন পদার্থবিজ্ঞান থেকে নিউরাল নেটওয়ার্কে কাজ শুরু করেন, তখন তাঁকে দুটো দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। জীববিজ্ঞানীরা তাঁকে ‘বহিরাগত’ হিসেবে দেখতেন, আর কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা বলতেন যে এই কাজ কোনো বাস্তব সমাধান দিতে পারবে না। তবুও, তিনি নিজের বিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন। যখনই তাঁকে কেউ বলত, “এটি সম্ভব নয়,” তিনি আরও বেশি অনুপ্রাণিত হতেন প্রমাণ করতে যে এটি সম্ভব।
জিওফ্রি হিন্টন: অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প
অনুপ্রেরণার গল্প:
১৯৪৭ সালে লন্ডনের উইম্বলডনে জন্ম নেওয়া জিওফ্রি হিন্টন বড় হয়েছেন এক শিক্ষাবিদ পরিবারের মধ্যে। তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন চার্লস ডারউইনের তত্ত্বের সহ-উদ্ভাবক। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন কৌতূহলী এবং নতুন কিছু শেখার প্রতি গভীর আগ্রহী। এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পিএইচডি করার সময় তিনি একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন: নিউরাল নেটওয়ার্ককে তখন অনেক বিজ্ঞানীই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করত।
১৯৮০-এর দশকে তিনি ডেভিড রুমেলহার্ট এবং রোনাল্ড উইলিয়ামসের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন ব্যাকপ্রোপাগেশন অ্যালগরিদম। এটি নিউরাল নেটওয়ার্ককে শেখার ক্ষমতা প্রদান করে। কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কার তখন খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। বিজ্ঞানীদের অনাগ্রহ, গবেষণার জন্য অর্থের অভাব এবং সহকর্মীদের নিরুৎসাহ সত্ত্বেও হিন্টন নিজের বিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন।
সংগ্রামের গল্প:
১৯৯০-এর দশকে যখন এআই নিয়ে গবেষণার অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়, তখন একে বলা হত “এআই উইন্টার”। অনেকেই নিউরাল নেটওয়ার্ক গবেষণা ছেড়ে দেন। কিন্তু হিন্টন এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাজ চালিয়ে যান। তিনি বিশ্বাস করতেন, একদিন কম্পিউটিং শক্তির বৃদ্ধি এই প্রযুক্তির আসল সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।
তাঁর সেই দিন আসে ২০১২ সালে, যখন জিপিইউ এবং বড় ডেটাসেট ব্যবহার করে তাঁর মডেলগুলোর ক্ষমতা পুরোপুরি বোঝা যায়। আজকের ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি তাঁর এই গবেষণার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৮ সালে তিনি টিউরিং অ্যাওয়ার্ড পান, যা কম্পিউটিং-এর “নোবেল পুরস্কার” নামে পরিচিত।
২০২৩ সালে, হিন্টন গুগল থেকে পদত্যাগ করেন। এআই-এর দ্রুত উন্নয়নের ঝুঁকি সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন করতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন এবং এআই উন্নয়নে নৈতিকতার গুরুত্বের কথা বলেন।